বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ: জমি সংক্রান্ত বিরোধে মারামারির ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও এক সাজোনো মামলার প্রধান আসামী হয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সাংবাদিক উবায়দুল্লাহ রুমি। সাংবাদিক রুমি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ঈশ্বরগঞ্জ শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হারুয়া বাসষ্ট্যান্ড নামক এলাকায় নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে একটি মার্কেট বেদখল করে নেয় মাইজবাগ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার কাজী আজীজুল হক। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদালতে মামলা চলে আসছে। হারুয়া বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক বসে। দরবারের বিষয়টি পুলিশ, সেনাবাহিনী সকলেই অবগত থাকায় দরবারে কোনপ্রকার হট্টগোল করতে পারেনি আজিজুল মেম্বার। এমনকি জোড় করে দখলে রাখা সম্পত্ত্বির বৈধ কোন কাগজ সালিশ বৈঠকে দেখাতেও পারেনি। দফায় দফায় সালিস হওয়ার পরেও কোন বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় উপস্থিত গণ্যমান্য লোকজন আজিজুল মেম্বারকে জায়গাটির বেদখল ছেড়ে দিতে বলে। নাছোড়বান্দা আজিজুল মেম্বার জায়গা না ছেড়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে প্রতিপক্ষকে। এ নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর উভয় পক্ষে সংঘর্ষে আহত হয় কাজী আজিজুল মেম্বার। এঘটনায় তার ছেলে কাজী আমিনুল হক কাউসার বাদী হয়ে (১৫ ডিসেম্বর) সাংবাদিক উবায়দুল্লাহ রুমিকে প্রধান আসামি করে ১২জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সাংবাদিক রুমিকে আমরা ঘটনার সময় দেখি নাই। তাকে কিভাবে আসামি করা হলো তাও জানিনা। আহত কাজী আজিজুল মেম্বারের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নামে হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ভূমিআত্মসাৎসহ ১০টির উপরে মামলা রয়েছে। উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য হওয়ার সুবাদে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিভিন্ন নিরিহ লোকদের নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছিল এই আজিজুল মেম্বার। আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ার কারণে এতোদিন তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি এলাকাবাসী।
এব্যাপারে সাংবাদিক উবায়দুল্লাহ রুমির সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময় আমি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে মারামারির সংবাদ পেয়ে বিষয়টি তাৎকনিক ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)কে অবহিত করে ঈশ্বরগঞ্জ চলে যাই। পরদিন বাদীর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে মামলার হুকুমের আসামি করা হয়েছে। অথচ এঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা এবং আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, সাংবাদিক উবায়দুল্লাহ ঘটনার সাথে জড়িত নয় বিষয়টি জানতে পেরেছি। কিন্তু বাদীর ঘোর আপত্তিতে তাকে আসামি করতে হয়েছে। সুষ্টু তদন্তে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাদী পক্ষের লোকজন সাংবাদিক রুমিসহ তার পরিবারের লোকজনের উপর যেকোন সময় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক। তিনি এখন বাদী পক্ষের প্রাণনাশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাংবাদিক রুমির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সুষ্টু তদন্ত পুর্বক তাকে মামলা থেকে অব্যহতি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন।
সাংবাদিকের রুমির নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা খায়রুল আলম রফিক। তিনি এক বিবৃতিতে বনেকের কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি খায়রুল আলম রফিক এ নিন্দা জানান। তিনি বলেন, পেশাদার সাংবাদিকের নামে মামলা দায়ের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। বনেক নেতারা আরও বলেন, এ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত করতে কোনো আপত্তি নেই। তবে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংবাদকর্মীদের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে।